সাজ্জাদ আকবর
দুনিয়া স্বীকার করুক বা না করুক, আফগানিস্তানের অর্থনীতি যে অভাবনীয় সাফল্যের পথে এগুচ্ছে, অন্য কোনো দেশ হলে সারা দুনিয়ায় হয়ত ফলাও করে প্রচার হত। ব্লুমবার্গ আর বিজনেস ইনসাইডার তৈরি করত এক্সক্লুসিভ কভারেজ। কিন্তু বিষয় যখন, আফগান অর্থনীতি তখন বিশ্বমিডিয়ার চোখে কিছুই পড়ছে না। বৈশ্বিক নানা পরিস্থিতির ভারে অনুন্নত দেশগুলো তো বটেই, চীন জাপান ভারত রাশিয়ার মতো বৃহত্তম অর্থনীতির দেশগুলোও যখন মুদ্রাস্ফীতিতে টালমাটাল, তখন একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে দাড়িয়েছে আফগানি মুদ্রা। বিগত পাঁচ বছরে আফগান অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর সর্বোচ্চ রেকর্ড এটা। আজ থেকে দুই বছর আগে তালেবানের ক্ষমতা গ্রহণের সময়টাতে যখন এক ডলার কিনতে ব্যয় করতে হত ১০৫ আফগানি মুদ্রা, ক্ষমতা গ্রহণের দুই বছরের মাথায় তা কমে দাড়িয়েছে ৭৩ মুদ্রায়। অর্থাৎ, ৭৩ আফগানি মুদ্রায় পাওয়া যাচ্ছে এক ডলার। ডলারের এই পতনের সুফল পড়তে শুরু করবে পণ্যের বাজারে। দাম কমবে সব পণ্যের।
কল্পনা করা যায়, আঁতুড়ঘরে থাকা বিধ্বস্ত একটি রাষ্ট্রকে কীভাবে ভাতে মারতে চেয়েছিল পশ্চিমারা? তালেবান ক্ষমতা দখলের সাথে সাথে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে সব ধরনের অর্থ সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছিল। ক্ষুধার্ত, রুগ্ন, সহায় সম্বলহীন আফগান জনগণের দিকে তাকিয়ে সামান্যতম মানবতাবোধও জাগে নি তাদের পাষাণ হৃদয়ে। কীসের মানবাধিকারের কথা বলে তারা? যে জনগণকে তারা নিজেরা ভাতে মারতে চেয়েছে, তথাকথিত মুক্তচিন্তা আর নারী স্বাধীনতার নামে সেই জনগণের জন্য বুলি কপচানোর স্পর্ধা তারা পায় কোত্থেকে?
কীসের নারী অধিকার? রাষ্ট্রীয়ভাবে হিজাব নিষিদ্ধ করে ইউরোপের ফ্রান্স যে নারী অধিকার হরণ করেছে, সে ব্যাপারে তাদের কোনো বক্তব্য আছে?
দুইদিন আগে খবরে দেখলাম, আফগানিস্তানের সাথে রাষ্ট্রদূত বিনিময়ের ব্যাপারে আলাপ করছে মিশর। তালেবানের ক্ষমতা দখলের পর এই প্রথম মিশর আগ্রহ প্রকাশ করলো। দেখা যাক, প্রক্রিয়া কতদূর আগায়? তবে তালেবানের সূত্রগুলো জানাচ্ছে, রাষ্ট্রদূত বিনিময় হলেও মিশর তালেবান সরকারকে এখনই স্বীকৃতি দিচ্ছে না। যতক্ষণ না আমেরিকা ও পশ্চিমা জোট এ পথে হাঁটে।
পরিস্থিতির যে নাটকীয় পট পরিবর্তন হচ্ছে, তাতে মনে হয়, আন্তর্জাতিক সমাজের যাবতীয় অসহযোগিতা, অস্বীকৃতি আর অপপ্রচার কোনো কিছুই তাদের অগ্রগতির পথে অন্তরায় হতে পারবে না। হয়ত এমন একটা সময়ও আসবে, পৃথিবীর দ্বিতীয় সারির দেশগুলো স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য পাল্লায় নেমে পড়বে।