মুহাম্মাদ তাওহীদুল ইসলাম
শাইখুল আযহার ড.আহমাদ তাইয়িবের তত্ত্বাবধানে গত ৩০শে অক্টোবর সোমবার আল- আযহার কনফারেন্স সেন্টারে আয়োজিত হলো আল আযহার ইউনিভার্সিটির ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষের বিদেশী স্নাতকদের জমকালো এক সমাবর্তন অনুষ্ঠান৷ শাইখুল আযহার ড.আহমাদ আত-তায়্যিব আযহারীদের মাঝে কুদসের চেতনাকে চির জাগরুক করে রাখতে ও বিশ্বব্যাপী এই চেতনাকে ছড়িয়ে দিতে এ বছরের আযহার ইউনিভার্সিটির স্নাতকদেরকে নাম দিয়েছেন ‘শুহাদায়ে গাযা- ২০২৩ ব্যাচ’৷ এছাড়াও এই ব্যাচের গ্র্যাজুয়েশন মেডেল ও সংবর্ধনা সার্টিফিকেটেও যুক্ত ছিল ফিলিস্তিনের জাতীয় পতাকা। অনুষ্ঠানের আলোচকদের বক্তৃতায়ও বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছিল ফিলিস্তিন ইস্যু৷
অনুষ্ঠানে আল-আযহার ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন অনুষদের বিশ্বের ৪০ টি দেশের ৮০০ জন স্নাতক উপস্থিত ছিল৷ যাদের প্রত্যেককে সম্মাননা সার্টিফিকেট এবং মেধা তালিকার স্নাতকদের বিশেষ ক্রেস্ট ও সম্মাননা সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়৷ সমাবর্তন অনুষ্ঠানের শুরুতে মিসরের জাতীয় সংগীত পাঠ করার পর ফিলিস্তিনের জনগণের সাথে সংহতি প্রকাশ করে গাযার শহীদদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়৷
উদ্বোধনী বক্তব্যের পর শুরু হয় স্নাতক অঙ্গিকার পর্ব৷ আযহারের স্নাতক সমাবর্তন অনুষ্ঠানের
অঙ্গীকারনামা ছিল নিম্নরূপ:
স্নাতক অঙ্গিকার:
“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসূল। আমরা আল্লাহকে আমাদের প্রভু হিসেবে, ইসলামকে আমাদের ধর্ম হিসেবে এবং মুহাম্মদ
(সা.) কে আমাদের নবী ও রাসূল হিসেবে গ্রহণ করে সন্তুষ্ট।
আমরা আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের
স্নাতকরা আল্লাহর কাছে অঙ্গীকার করছি,
প্রথমত: আল্লাহর সকল হুকুম মেনে চলবো এবং তার নিষেধ এড়িয়ে চলবো৷
দ্বিতীয়ত: উত্তম আখলাক ও প্রশংসনীয় গুণাবলি দিয়ে নিজেদের জীবন সজ্জিত করবো৷
তৃতীয়ত: আল-আযহারের প্রকৃত দূত হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকবো, ইসলামি দাওয়াহ ছড়িয়ে দিবো এবং সমাজ ও জাতির সেবা করবো।
চতুর্থ: সারা বিশ্বে আল-আযহারের সম্মান রক্ষা করবো।
আমি সর্বশক্তিমান আল্লাহর শপথ করে বলছি যে, হিকমাহ ও উত্তম উপদেশের মাধ্যমে
মানুষকে আমার আল্লাহর পথে ডাকবো৷ আমাদের মহানবী (সা.)-এর সুন্নাহ অনুসরণ করে চলবো এবং আল-আযহার শরীফের চেতনায় অটল অবিচল থাকবো। এবং আমি যা শিখেছি তার আলোকে জাতির উপকার এবং মানবতার কল্যাণে কাজ করবো৷ আমরা যা বলছি, মহান আল্লাহ তার সাক্ষী।”
স্নাতক অঙ্গিকার পর্বের পর উপস্থিত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ অনুষ্ঠানে তাদের আলোচনা পেশ করেন৷ ড. মুহাম্মদ আদ-দুওয়াইনী তার বক্তব্যে স্নাতকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, তোমরা যেহেতু আল-আযহারের প্রাঙ্গণে নির্দিষ্ট একটি সময় কাটিয়েছো এবং আযহারের উলামায়ে কেরাম থেকে তাদের ইলম, চিন্তা-চেতনা ধারণ করেছো, সুতরাং অবশ্যই আল-আযহারের শিক্ষা ও চেতনা সব সময় তোমাদের হৃদয়ে বহন করতে হবে। তোমাদের কাজে-কর্মে এর বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে হবে। তোমাদের কারো অজানা নয় যে, আল-আযহার শরীফ একটি শিক্ষা ও দাওয়াতী প্রতিষ্ঠান, যা একটি মহান মিশনের ঝাণ্ডা নিয়ে চলছে আর তা হলো, পবিত্র কোরআনুল কারীম ও রাসূলের সুন্নাহ ও আরবি ভাষা সংরক্ষণ৷ আল-আযহার তার মহান মিশন সঠিকভাবে আঞ্জাম দেওয়ার জন্য যুগের চাহিদা ও শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রতিনিয়ত আযহারের শিক্ষা ব্যবস্থা ও পাঠ্যক্রমের উন্নয়ন করে যাচ্ছে৷ এবং বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ধরণের ইসলামী খেদমত করে যাচ্ছে৷ আল-আযহারের বার্তা সমগ্র বিশ্বে পৌঁছে দিতে আযহারকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করা আমাদের সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য৷
ড. নাজির আইয়াদ তার বক্তব্যে বলেন, ‘গাজা শহীদ ব্যাচ’ নাম করণের মাধ্যমে আযহার তার সন্তানদের বিবেক ও হৃদয়ে ফিলিস্তিন ইস্যুটিকে পুনরুজ্জীবিত করতে একটি মেসেজ দিল৷ আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড.সালামা দাউদ তার বক্তব্যে বলেন, গ্র্যাজুয়েশন মেডেল ফিলিস্তিনি পতাকা যুক্ত করে একটি বার্তা দিতে চাই আমরা। আর তা হলো, ফিলিস্তিনের জন্য আমাদের জীবন উৎসর্গিত৷ ড.নাহলা সাইদ তাঁর বক্তব্যে তিনি বলেন, আজকের এই দিন আমার জন্য যেমন আনন্দের, তেমন বেদনার৷ আনন্দের দিন এজন্য যে, তোমরা আমার সন্তান৷ আমার সন্তানেরা শিক্ষা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়ের শেষ করেছে তাই আমি মা হিসেবে আমি আনন্দিত, আমি পুলকিত৷ আবার আজকের দিন বেদনারও। কারণ, আজকের দিনে তোমাদের অনেকের সাথে আমার বিদায় ঘটে যাচ্ছে।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে ইন্দোনেশিয়ার সাবেক মন্ত্রী, মেজর জেনারেল শেফার ক্যাম্পো স্নাতকদের অভিনন্দন জানিয়ে তার বক্তব্যে বলেন, আমরা আল-আযহার গ্র্যাজুয়েটদের নিয়ে গর্ব করি এবং আমরা দেশের নবজাগরণের জন্য তাদের প্রতি দৃঢ় আশা রাখি৷ আযহারের ‘মারকাযু তাতবীরি তালীমি তুল্লাবিল ওয়াফিদিন’ কর্তৃক আয়োজিত উক্ত স্নাতক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ওয়াকিলুল আযহার (আল-আযহারের আন্ডার সেক্রেটারি) ড. মুহাম্মদ আব্দুর রহমান আদ-দুওয়াইনী, আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড.সালামা দাউদ, মাজমাউ বুহুসিল ইসলামি (ইসলামিক রিসার্চ একাডেমি) এর সেক্রেটারি-জেনারেল ড. নাজির আইয়াদ, শাইখুল আযহারের বিদেশী শিক্ষার্থী বিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. নাহলা আল-সাঈদী, আল আযহারের বিভিন্ন পর্যায়ের সিনিয়র কর্মকর্তাগণ, আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের সাবেক ও বর্তমান ডীনগণ, বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিবিদগণসহ আরো অনেকে৷
লেখক: মুহাম্মদ তাওহীদুল ইসলাম
স্নাতক, হাদীস ও উলূমুল হাদীস বিভাগ,
আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়, মিশর।